পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগৎ দর্শনঃ পর্ব - ২০

''যে রত্ন প্রাণের শান্তি, তাতে কি আসে ক্লান্তি ? 
একবার বললে বাবা, নিভে যায় দোজখ হাবা ।" 

মুলাধারে এসে স্থির হয়ে যাওয়া এই শক্তিকে যদি সুহ্মা বায়ু দ্বারা উত্তপ্ত করা যায় তাহলে ব্যারোমিটারের রন্ধ্রপথে ঊর্ধ্বমুখী পারার মত এই শক্তি উল্টো গতিতে উৎপত্তি স্থান অর্থাৎ ব্রহ্মারন্ধ্রের দিকে ফিরে চলে। ব্রহ্মারন্ধ্রের শূন্যতার মধ্যে তাকে লুপ্ত করে নিতে পারলেই জগৎলীলা শেষ। জগৎ মানেই মায়ার বাঁধন,জন্ম-মৃত্যু এবং সুখ দুঃখের বৃত্তাকার খেলা। শূন্যে এই শক্তি লয়প্রাপ্ত হলেই জগত লীলারও শেষ অর্থাৎ মুক্তি । মুলত যে সব যোগী ব্রহ্মারন্ধ্রের এই শূন্য তাদের চেতনাকে নিয়ে যেতে পারেন- তাঁরা পরম এক প্রশান্তি বোধ করেন। এরপর জীবদেহে বেচে থাকলেও সুখ-দুঃখ কোনটাই তাদের উদ্বেলিত করতে পারে না। 

ব্রহ্মারন্ধ্রের শূন্যতাকে বলা হয় “পরমান্তন” বা “আন্তন”। সেখানে শক্তি লুপ্ত হওয়া মানে আত্মস্থ হওয়া । এই আত্মস্থ করাকেই বলে খেয়ে ফেলা। যিনি শক্তিকে এইভাবে আত্মস্থ করতে পারেন তিনি পরম প্রশান্তি প্রাপ্ত হন। কারন এই আত্মার স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে “ শান্তো ইয়মাত্মা” অর্থাৎ এই আত্মা অত্যন্ত শান্ত, নিবিড় নিদ্রায় যে প্রশান্তি অনুভব করা যায় এই প্রশান্তি সেই রকম। চঞ্চলা শক্তিকে এইভাবে আত্মস্থ করা গেলেই তাকে খেয়ে ফেলা হয়। সাধকের মূল লক্ষ্য এই শক্তিকে আত্মস্থ করা। সুতরাং গভীরতর এক ভাববোধ থেকেই রামপ্রসাদ সেন এই গানটি রচনা করেছেন। 

মীরার- “ জ্যোতি যে জ্যোতি মিলাও”- এ দেহতত্ত্বের গভীরতর পর্যায়ের গান। মুলাধার শক্তিকে যখন বিন্দুর জ্যোতির্মণ্ডলে নিয়ে যাওয়া যায় তখন মানুষের চেতনাতে সঙ্গস্কারের স্থুল বন্ধন এতটাই সূক্ষ্ম হয়ে যায় যে, জ্যোতিপূর্ণ সুক্ষাতম কাঁচের মত হয়ে যায় তা। বিন্দু পর্যায়ে পৌঁছালে সেই সূক্ষ্ম জ্যোতির্ময় কাঁচস্বরূপ জীবাত্মার আত্মসত্তার বিশ্বের বিন্দুসত্তার জ্যোতি এসে মিশে যায়। ব্যবধান থাকে অথচ তাকে একাত্মা বলে বোধ হয়। তখন দ্বৈতে থেকে অদ্বৈত এক মিলনের বর্ণনাতীত আনন্দ উপলব্ধি হয়। যারা প্রেমিক সাধক তাঁরা এই আনন্দ ত্যাগ করে নির্বিকল্প প্রশান্তির মধ্যে সকল বোধ হারিয়ে ফেলতে চান না, সাধক বা সাধিকা তখন কেবল সেই ভাবমূখে থাকতে চান। এই জন্যই মীরা নিজে স্থুলসত্ত্বার বহু আবরণ খুলে ফেলে আত্মজ্যোতির মধ্যে বিশ্বজ্যোতির অনুপ্রবেশ উপলব্ধি করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেয়ে উঠেছিলেন- “জ্যোতি যে জ্যোতি মিলাও”। 

আত্ম ও বিশ্ব গঠনের দিক থেকে একই ধরনের। দুইই সুক্ষা থেকে স্থুলে এসেছে। দুইয়েরই সুক্ষা অংশ পরতে পরতে স্থুলতার আবরণে আবদ্ধ। কিন্তু দুইজনের অবস্থান ঘূর্ণনের দিক থেকে ঠিক বিপরীত মুখে, যেমন বিজ্ঞানে “ MATTER ও ANTI-MATTER”। MATTER এর চার্জ যদি POSITIVE হয় ANTI-MATTER এর চার্জ হয় NEGATIVE । MATTER যদি বায়ে ঘোরে ANTI-MATTER ঘোরে ডানে । জীবাত্মা ও বিশ্বের গতিও ঠিক সেইরকম । জীবাত্মা বা দিকে স্থুল আবরণের এক প্যাঁচ খুললে বিশ্বও ডান দিকে স্থুল আবরণের এক প্যাঁচ খুলে ফেলে । জীবাত্মা তার প্যাঁচ খুলে যখন আত্মস্থ জ্যোতিতে প্রবেশ করে বিশ্বও তখন তার প্যাঁচ খুলে নিজস্ব জ্যোতিতে প্রকাশ পেতে থাকে । তার উভয়ের শেষ প্যাঁচটুকু খুলে গেলে অন্তরস্থ দুই শূন্য এক হয়ে যায় । দ্বৈত অদ্বৈত হয়ে একাকার হয় । চিত্রটি নিম্নরুপঃ












 চলবে...............