(পুর্বপ্রকাশের পর হতে)
“শব্দ হয় পরিচালক সনাক্ত করে সর্বলোক,
শ্রমিক তার মানবজাতি খাটছে তাই দিবা-রাত্রি।"
চলবে......
“শব্দ হয় পরিচালক সনাক্ত করে সর্বলোক,
শ্রমিক তার মানবজাতি খাটছে তাই দিবা-রাত্রি।"
দ্বিতীয় পর্বে আল্লাহর ফুঁৎকারের কথা বলা হয়েছে। যে জ্যোতির্ময় “ফুঁ”
উনি মানব দেহে প্রবেশ করান সেটা মাথার তালু থেকে কুণ্ডলিনি গর্তে প্রবেশ করে,যখন মানুষ জন্ম গ্রহন করে পৃথিবীতে আসে তখন মানুষের মাথার মাঝখানে তুলার মতন তুলতুলে নরম থাকে। মাথার তালুর এই অবস্থানকে বলা
হয় ব্রহ্মরন্দ্র।
ব্রহ্মরন্দ্রের শুন্যস্থিত সুপ্ত শক্তি ফুটে ওঠার আবেগ পাওয়া মাত্র তা “বোধ” অর্থাৎ “আছি” এই বোধ সৃষ্টি
করেন। এই বোধই হল
চিৎ বা চৈতন্য। শূন্যতা
অবর্ণনীয়, কিন্তু চিৎ বর্ণনীয়। চিৎ এর অবস্থা স্বচ্ছ
দর্পণের মতন অর্থাৎ আয়না মহল। আনন্দের অবস্থা জ্যোতিপূর্ণ, এই জ্যোতি ভ্রু
মধ্যস্ত আজ্ঞাচক্র অবধি নেমে আসার সময়—সূক্ষ্ম বর্ণ রূপে স্তরে স্তরে নেমে আসে অর্থাৎ যথার্থ বর্ণের Essence বা তন্মাত্র অবস্থায়
নেমে আসে, এইহল বীজের মধ্যে মহীরুহের তন্মাত্র অবস্থায় থাকার মতো। আজ্ঞাচক্রে এসে এই তন্মাত্র বর্ণ
গুলি বিস্ফোরণের আকারে অসংখ্য বর্ণদ্যুতি বিকিরন করে, বিশুদ্ধচক্রে নেমে তা স্বচ্ছ নীল
বর্ণ ধারণ করে। অনাহুত পর্যায় এলে আকাশের নীলিমার রং প্রাপ্ত হয়।
মণিপুরে তা তেজোময় ধুম্রপুঞ্জের
মতো হয়।
স্বাধিষ্টান সবুজ বর্ণ ধারণ করে। মূলাধারে লাল বর্ণ হয়। তাত্ত্বিক তন্ত্র শাস্ত্রের সঙ্গে এর হয়তো মিল
হয় না কিন্তু যারা
ক্রিয়াযোগে অভ্যস্ত তারা চৈতন্যধৃত অভিজ্ঞতায় উপরোক্ত বর্ণগুলিই প্রত্যক্ষ করেন। বর্ণের এই প্রত্যক্ষকরন অবরোহ
পর্যায়ে হয় না। হয়
আরোহ পর্যায়ে। এই পর্যায়ের স্বরূপ
বুঝতে গেলে শক্তির স্বরূপও কিছুটা জানা দরকার।
শূন্যস্থিত শক্তি আবেগ জনিত কম্পনে বিস্ফোরিত হলে কেন্দ্র থেকে সম্প্রসারিত হয়ে দুরে সরে যেতে থাকে। এই সম্প্রসারণ অর্থাৎ
কেন্দ্র থেকে দুরে সরে যাওয়াকেই বলে অবরোহণ। মানুষের দেহে ব্রহ্মরন্ধ্ থেকে নামতে নামতে এই শক্তি মূলাধারে
এসে স্থূলত্ব লাভ করে । যেমন বিশ্ব
জগত একান্নতম পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে দুরে সরে এসে বৃত্তের প্রান্তে স্থুলতা প্রাপ্ত হয়। শক্তি স্থুলতা প্রাপ্ত হয়ে মূলাধারে এসে ঘনীভূত হলে দেহ যন্ত্রের শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া প্রতিনিয়ত যেখানে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে যে তাপ উৎপন্ন
করে সেই তাপে দেহ জীবিত থাকে। মূলাধারের অবস্থান মলদ্বার ও প্রসাবদারের মাঝখানে।
শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া সেখানে এসে কিভাবে প্রতিনিয়ত আঘাত করছে, যে কোন ব্যক্তি
শ্বাসপ্রশ্বাস কালে গুহ্যদ্বারে হাত দিয়ে দেখলেই তা বুঝতে পারবেন।
বুঝতে পারবেন যে, প্রতি শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া সেখানেও ওঠা-নামা হচ্ছে। এটা হল অতি স্থুল
পর্যায়ের ওঠা-নামা। এতে দেহকে জীবিত রাখার জন্য মূলাধারের সুপ্ত শক্তিতে যতটুকু আঘাত করা প্রয়োজন ততটুকুই আঘাত করা হয়। ফলে মানুষের চেতনা স্থুল পর্যায়ে থাকে। এই স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস
এক এক জন মানুষের
ক্ষেত্রে এক এক মানের।
জগতে যারা মনীষী ব্যক্তি বলে পরিচিত তাদের এই শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়ার
মুলাধারস্থ সুপ্ত শক্তিকে আঘাত হানার ক্ষমতা বেশি। সাধারন সুপ্ত শক্তির একশ ভাগের দশ ভাগ শক্তি
এর ফলে জাগরিত হতেপারে, তার বেশি নয়। এই দশ ভাগ
শক্তি যাদের জাগরিত হয় তারা জগতের
আইনস্টাইন শ্রেণীয়ে চিন্তাবিদ হিসাবে বিশেষ মনীষী বলে গণ্য হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই শক্তি তিন,ছার,পাচ অথবা ছয় শতাংশ ভাগে
জাগরিত হয়। কিন্তু যারা দেহতত্ত্বের কলা কৌশল জানেন এবং জ্যোতির্ময় বায়ুর স্বরুপ বোঝেন, তারা এই শক্তিকে আরও
বেশি করে জাগরিত করে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হন। কারণ Astrophysics এ দেখা গেছে
যে, শক্তির ঊর্ধ্ব গতি হলে এর মাত্রা বেড়ে
যায় এবং মাত্রা বেড়ে গেলে ভেতর বাইরে চলে আসে। অর্থাৎ INSIDE TURNS OUT । এরই ফলে
নিজের ভেতরে অনন্ত বিশ্বকে দেখা যায়।