পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন - পর্ব ১৮

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

“বলছ সব অগণন, কালে কি তা হবে পুরন ?
 তাইতো তব শত ধন্য, তুমি যে গো বিশ্ব বরেণ্য”...... 

এই মস্তিষ্ক স্নায়ু হইল তৃতীয় নয়ন অর্থাৎ অন্তর চক্ষু। অসীম নীলিম আকাশই হইল নজরুলের গানের উৎস – যখন তিনি লিখেছেনঃ 

“ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর।” 

যে পর্যায়ে নীলাভ অনন্তবিস্তার আকাশে এই সব রহস্যময় দর্শন হয় তাকেই দেহতত্ত্বে অনাহত চক্র ( দেহের যে স্তরে শক্তি পৌঁছালে মানুষের চেতনাতে সুখ-দুঃখ বোধ থাকে না অর্থাৎ মানুষ সুখ-দুঃখ দ্বারা আহত হয় না।) বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আত্মমগ্নতা আরও তীব্র হলে জ্যোতির্ময় এক নীলাভ ব্যপ্তি চোখে পড়ে। এখানে নানা অলৌকিক দর্শন হয়। দেহতত্ত্বে এই পর্যায়কে বিশুদ্ধ চক্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রান্ত ভাগ থেকে কেন্দ্রের দিকে প্রত্যাবর্তন কালে এই রঙ গুলি চোখে পড়ে। কারন সৃষ্টির কেন্দ্রে বিস্ফোরণ হলে ক্রম পর্যায়ে যতই বিশ্ব জগৎ কম উষ্ণ হতে থাকে, ততই শক্তি তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সির তারতম্য হেতু রঙের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ASTROPHYSICS এ তাই বলা হয়েছে বিশ্বের আদি পর্যায়ে দেশ (SPACE) প্রচণ্ড ভাবে আলোকিত ছিল। 

আত্মমগ্নতা আরও তীব্রতর হলে এমন এক পর্যায়ে যাওয়া যায় সেখানে আকস্মাৎ বিস্ফোরণে নানা রঙের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে থাকে। দেহতত্ত্বে এই পর্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে আজ্ঞাচক্র। এই আজ্ঞাচক্রই হল দেবী জগতে অর্থাৎ সপ্ততলে প্রবেশের ছাড়পত্র। নিম্ন ষট চক্রের সকল রঙ ও স্বচ্ছতার এখানে তন্মাত্র অভিনয় হয়ে থাকে। স্বচ্ছ আয়নায় ফুটে থাকা প্রতিবিম্বের মত নানা রহস্যময় দর্শন এখানে হয়। বিন্দুমণ্ডলে কোন দর্শন হয় না কিন্তু আরও ঊর্ধ্বে উঠলে শাশ্বত স্বচ্ছস্তরে অর্থাৎ চৈতন্যমণ্ডলে সমস্ত বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ডকেই ফুটে থাকতে দেখা যায়। মানুষ নিজেই ঈশ্বর তুল্য হয়। সে তখন বলতে চায় – “আমিই সেই”। অর্থাৎ আমার মধ্যেই সমগ্র বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ড প্রতিবিম্ব হয়ে আছে। এই দর্পণ সদৃশ জগৎ যা মানুষের নিজের মধ্যেই আছে। 

সাধনার অভাবে মানুষ তা দেখতে পায় না। রামপ্রসাদের সেই গানের মত – “মানব জীবন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা”। কর্ষণের অর্থাৎ কৃষ্টি বা চর্চার অভাবে মানুষ নিজের অভ্যন্তরের সত্যকে জানতে পারে না। যা আছে নিজের মধ্যে লুকিয়ে, তাকে পাবার জন্য বাইরে ঘুরে বেড়ায়। ইদানিংকালে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ অভিযান করেন। এত কাছে সত্য লুকিয়ে আছে যে, সে খবরটাই তারা রাখেন না। এ জন্যই লালন বাবা লিখেছেন – “ঘরের কাছে আরশি নগর, সেথায় এক ঘর পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে”।

 চলবে....................................