পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ১২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

“বলছ যে সবাই ঘোরে
নিজ নিজ কক্ষপরে।”

সে যাক। তত্ত্ব কথা থাক। দেহ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে আমরা যে কতকগুলি মরমিয়া গানের ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছিলাম, সে কথাতেই আসা যাক। 

দেহ তত্ত্বে ব্রক্ষ্ম রন্ধ্র থেকে শক্তির মূলাধার পর্যন্ত অবরোহনের কথা বলেছি। এবার আর এক পর্যায়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলা যায়। প্রানায়ামের ফলে মূলাধারস্থ শক্তি যখন ঊর্ধ্বগামী হয়, তখন ক্রম ঊর্ধ্ব পর্যায়ে শক্তি যে পর্যায়ে থাকে, অরোহ পর্যায়ে সেই সব ধাপের সূক্ষ্ম জগত সে অবলোকন করে। তবে এই অবলোকন যে সে চর্ম চক্ষুতে করে তা নয়। করে তৃতীয় নয়নে অর্থাৎ অন্তর চক্ষুতে। এই তৃতীয় নয়ন হল তার মস্তিষ্কের স্নায়ুমণ্ডলী – VISUAL NERVE এ। 

মূলাধারস্থ শক্তি এক এক ধাপ ঊর্ধ্ব দিকে উঠলে মেরুদণ্ড রূপ নালী বা তার (WIRE) বেয়ে মস্তিষ্ক স্নায়ুতে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। যদি অনুরূপ তরঙ্গের কোন জিনিসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে যায়, তাহলে সেই পর্যায়ের ছবিগুলো তার রিসেপটিভ ব্রেনতরঙ্গে ধরা পড়ে টিভির পর্দার মত ছবির PROJECTION তৈরি করে। ফলে বাংলাদেশের কোন ঘরে বসে যে তরঙ্গ তার মস্তিষ্ক স্নায়ুগুলি রয়েছে অনুরূপ তরঙ্গের দূর আমেরিকার কোন শহর বা মানুষের চিত্র তার চোখে ধরা পড়তে পারে। অন্তত কেউ কেউ এই দূরশ্রুতি বা দর্শনকে সমান্তরাল তরঙ্গ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। এখন দেখা যাক শক্তির অরোহ পর্যায় ব্রেন তরঙ্গে কি কি দৃশ্য একজন সাধকের বা তত্ত্ বজিজ্ঞাসু গবেষকের তৃতীয় নয়নে ধরা পড়ে। 

শক্তির আরোহ পর্যায়ে যখন সে মূলাধার চক্র নড়ে ওঠে তখন গবেষক বা সাধক অদ্ভুত এক রং দেখতে পান। সে রং সন্ধ্যার ছায়ায় ঢাকা লাল বর্ণের আকাশের মত অর্থাৎ ফ্যাকাশে লাল রঙের কিছুটা ঘন তরল অবস্থা। কেউ কেউ এই সময় একটি কালো হাতের আশীর্বাদ ভঙ্গির লাল করতল দেখতে পান। তান্ত্রিকরা একেই বলেন ‘মায়ের হাত’। যারা এই হাত দেখতে পান তাদের ঊর্ধ্বগতি ও অতিন্দ্রিয় দর্শন অনিবার্য। এছাড়া অকস্মাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মত তীব্র আলোকচ্ছটাও দেখতে পান কেউ কেউ। এ হল ঐশ্বরিক দীপ্তির ক্ষণিক প্রকাশ। তন্ত্রে এ ধরনের আলোকে বলা হয়েছে ‘কোটি সূর্য বিভাযিতম’। 

ব্রহ্মাণ্ডের আদি পর্যায়ে এই সুতীব্র আলো দেখা যায়। সে এত তীব্র আলো যে সাধক বা গবেষকের মনে হয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল। হয়তো বা চোখ অন্ধ হয়ে যাবে (চিত্র- ১) । শক্তি যখন আর একটি ঊর্ধ্ব পর্যায়ে ওঠে তখন শক্তি স্বাধিষ্ঠান মণ্ডলে এলে তখন সেই ফ্যাকাশে লাভা তুল্য লাল রঙের মধ্যে আরেকটা লাল রঙের মধ্যে বৃত্তাকার একটি সবুজ বৃত্ত দেখা যায়। সেই সবুজ বৃত্ত ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে জলো ছায়া ছায়া এক জগতে প্রবেশ করে। দিনের বেলা পুকুরে ডুব দিয়ে চোখ মেলে তাকালে  যেমন সবুজ সবুজ ভাব দেখা যায় সেই রকম। পরে তা ধীরে ধীরে ছায়া ছায়া হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যাবেলা পুকুরে ডুব দিয়ে চোখ মেলে তাকালে যেমন দেখা যায়, সেই রকম হয় (চিত্র- ২) । 

মুলাধারস্থ শক্তি যখন আর এক ধাপ উপরে ওঠে অর্থাৎ মণিপুর চক্র আসে তখন সে তেজোময় ধূম্র  পুঞ্জ দেখতে পায়। সেই ধূম্র  পুঞ্জ দেখতে অনেকটা নিদাঘদগ্ধ মধ্যাহ্ন গগনের মত (চিত্র - ৩) ।  এরপর শক্তি যখন আরও ঊর্ধ্বে উঠতে আরম্ভ করে তখন সাদা মেঘের আকাশে যেন কোদলে মেঘের মউজ উঠে। এই মেঘকে বলা হয় ‘INTERSTELLAR DUST’ অর্থাৎ সাদা মেঘ থোকায় থোকায় কাটতে আরম্ভ করে এবং তার ফাঁকে ফাঁকে শরতের নীল আকাশের মত আকাশ উঁকি দেয়। ঠিক যেন ছানা কাটা দুধের ফাঁকে নীল পানি ফুটে ওঠার মত। যখনই অনাহুত চক্রের দিকে শক্তির অগ্রগতি পথের সাদা জ্যোতির্ময় মেঘের ফাঁকে ফাঁকে আবার নীল আকাশ উঁকি দেয় তখন সাধক নিজের সারা দেহমনে অদ্ভুত এক আনন্দের এক শিহরণ অনুভব করেন। কখনও কখনও যেন বহুদুরে আকাশ থেকে সেই নীল অংশ বেয়ে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে গম্ভীর এক আওয়াজ ধ্বনি ভেসে আসে – ‘আল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু – অ-উ-ম, অ-উ-ম, অ-উ-ম’। অনেকটা যেন অদ্ভুতরকম রহস্যময় ধ্বনি (চিত্র- ৪) ।


 চলবে.........