পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

হাফিজ সিরাজির কবিতাঃ অনুবাদ-সৈয়দ শামসুল হক




















৩.
মৃগনাভির গন্ধে মাতাল ভোরের হাওয়া ছুটবে।
বুড়োর হাড়ে লাগলে হাওয়া- যুবক হয়ে উঠবে!
বইবে ফের ফাল্গুনের সোরাহিতে সুরার ঢল,
গাছের ডালে ফুটবে ফের মন ভোলানো ফুলের দল।
খুলবে তারা পাঁপড়ি তো নয়- সরাইখানার দরজাটাই!
থাকবে কেন ঘরের কোণে? ডাকছে শোনো, চলো না যাই।
নেশার টানে আবার কত ইয়ার এসে জুটবে!
অনেকদিনের দুঃখশোকের চাবুক দেখো থামবে।
বিচ্ছেদের পরেই আসে মিলন- এটি জানবে।
সেই যে পাখি হাহাকারের, কণ্ঠে ফিরে পাবেই গান।
গোলাপফুলের লাল তাঁবুতে আসবে ফিরে মেহমান।
মসজিদে কি কাল কাটাবে? সরাই ডাকে দুর্নিবার।
মোল্লা বসে ওয়াজ করুন! শুনবে তুমি কতই আর!
আয়ু যতই দীর্ঘ হোক, হ্রস্ব বলেই জানবে!
মূর্খ রে মন! বর্তমানের মজায় যদি না মাতিস,
আসছে কাল আগামীতে হবি কি আর খুশ্নবিশ!
এখন যেটি সেটাই সেটি- এর চেয়ে কী সত্য আর?
শাবান মাসে নামিয়ে রাখ্ পুরোনো সব শোকের ভার।
আবার হাতে নে ‘পেয়ালা, পান করে হ’ টালমাটাল-
ফজর থেকে মাগরিবের হিসেবটা হোক বে-সামাল।
উঠলে চাঁদ রমজানের তখন না হয় রোজা রাখিস!
ওই যে দেখি গোলাপবনে ফুটছে ফুল রক্তলাল-
লজ্জাবতী পাঁপড়ি খোলে, সংকোচে কি কাটবে কাল?
বনের পথে পায়ের ভীরু শব্দ শুনি সেই যে তার-
বসন্তকাল কেটে গেলেই থাকবে না সে এখানে আর।
চারণ-কবি নীরব কেন? গান ধরো হে স্বাগতমে-
মন মাতানো সুরের দোলা, খুশি হবে না তার কমে।
যা হয় হবে আজকে হবে, পরের কথা আগামীকাল!
হাফিজ, শোনো সংগীতের সুরলহরী উদ্যানে।
অন্ধকারে কী লাভ থেকে? আলোয় এসো এইখানে।
যদিও পথ বারেবারেই অন্ধকারে ঘুরে যায়-
তবুও যেন তোমার বাণী সপ্তস্বরের স্পর্শ পায় ॥