পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

হাফিজ সিরাজির কবিতাঃ অনুবাদ-সৈয়দ শামসুল হক




















২২.
রূপবতী, যদি তুমি দাঁড়াও সমুখে,
গলায় জড়িয়ে যদি দাও ওই হাত,
তোমার গোলাপী গাল, ভালোবাসা বুকে,
এ কবি তখনই বাঁচে, বলে বাজি মাৎ-
তুচ্ছ ওই বোখারার সোনার ভান্ডার!
সমরখন্দের মণি? চাই না আমার!

তরল চুনির মতো সুরা ঢালো, সাকি!
নিরাশ হৃদয় ধরে রেখো না হে আর!
গোঁড়া ওই মোল্লাদের কথায় কী থাকি!
এমন নহর আর এই বাগিচার
মতো আর পাবে না হে রওশনাবাদে!
সে যদি সমুখে তবে পাত্র নাও হাতে।

যখন এমন কেউ এসে যায় কাছে-
যখন চোখের তীরে বিদ্ধ করে তারা,
যখন উন্মুখ মন ভালোবাসা যাচে,
মুহূর্তেই আমি হয়ে যাই সর্বহারা!
তাতার দস্যুর হাতে যেমন পথিক-
দ্যাখো আমি সর্বস্বান্ত তারও যে অধিক!

এই যে হৃদয় পোড়ে প্রেমের আগুনে-
চোখের এই যে অশ্রু- সাধ্য আছে তার
শর্করার স্বাদ আনে জীবনের নুনে?
ওই যে গোলাপী গাল, লাল আভা তার
পারে কি রাঙিয়ে দিতে দুনিয়ার ছবি?
তাহলে কিসের কাব্য? কোন্ ছার কবি!

কপালে যা আছে হবে! তুমি গান গাও,
বাগানে যে ফোটে ফুল তার কথা বলো,
শরাবের কথা যেন একটু না থামাও-
যতই তোমার চোখ হোক ছলোছলো।
যদিও এ সবই স্বপ্ন, মেঘে ঢাকা চাঁদ-
আশা না রাখলে হবে সবই বরবাদ!

রূপের এমনই জাদু, সেই ইউসুফ-
কী হলো দশাটি তার জুলেখাকে দেখে!
মুহূর্তেই মেশে তার রূপ ও অরূপ-
তৃষ্ণা জাগে- ইতিহাস এ কথাই লেখে।
এমন দেখিনি আর, শুনবো না আর-
অরূপ সন্ধানে রূপ! এমনই আমার!

রূপবতী তুমি অতি, আমার মিনতি,
আমাকেও দয়া করো, আমি প্রার্থনায়-
একবার যদি পাই তোমার সম্মতি
তবেই উঠবে চাঁদ এ অমাবস্যায়।
শরাব ঢালছে সাকি পেয়ালায় ওই-
এসো মাতি, এ সুধায় মাতাল তো হই!

কঠিন জবাব দিলে! তুমি কী নির্দয়!
এতটা বিরাগ! আমি তবু তোমাকেই
দিয়েছি সর্বস্বসহ দুর্বহ হৃদয়।
তুমি ছাড়া প্রার্থনার আর কিছু নেই।
যে ঠোঁটে এতটা মধু, তাতে কেন নুন?
এত যে শীতল চাঁদ- জ্যোৎস্নায় আগুন!

হাফিজ, কাতর তুমি রূপের সাক্ষাতে-
না হয় বিরূপ! আর তুমি কী উৎসুক!
মণি ও মুক্তার মতো শব্দরাজি হাতে
যদি পারো গাও গীত, ভাষা তো ফুটুক!
অন্তত তোমার কাব্য সে ভালোবেসেছে-
জেনে রেখো- যথালাভ! ওঠো তাই নেচে!