পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

হাফিজ সিরাজীর কবিতাঃ অনুবাদ সৈয়দ শামসুল হক





















কেনান থেকে আসবে ফিরে- কোরো না শোক ইউসুফের।
নিরুদ্দেশের মাত্র ক‘দিন! চোখের পানি ফেলো না ফের।
কেঁদো না আর। কাঁদবে কেন? দুঃখশোকের খরাতেই
গোলাপকুঁড়ি উঠবে ফুটে সুগন্ধ তার ছড়াতেই।
বুকে তোমার গোপন ব্যথা, বিষণ্ণতায় মলিন মুখ-
আবার হয়ে উঠবে আলো, আসবে ফিরে মিলন সুখ,
শান্ত হবে দগ্ধ হৃদয়।
চোখের পানি ফেলো না ফের।
চোখের পানি ফেলো না ফের- ফিরবে ফুলের ফাগুন মাস,
আবার তুমি দেখতে পাবে বিরান মাঠে সবুজ ঘাস।
তারায় ভরে যাবে আকাশ তোমার কালো রাত্রিতে।
পাতায় ঢাকা ছায়ায় তুমি বসবে ফের শান্তিতে।
কালের এই কক্ষপথ মূর্খ তুমি জানলে না!
ভালোবাসার সত্য তুমি তোমার বোধে আনলে না।
কাঁদছো তাই? কেঁদো না আর।
চোখের পানি ফেলো না ফের।
এ হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ হবার পূর্বে তো
দিনের পরে আসবে দিন, কালের চাকা ঘুরবে তো।
একদিন তো হবেই হবে ভাগ্যতারা প্রসন্ন-
উঠবে হেসে আজকে যারা সন্তাপিত বিষণ্ণ।
তীর্থে যারা বেরিয়েছিল পৌঁছে যাবে তীর্থে ঠিক।
পারবে কি আর মন্দকাল ডুবিয়ে দিতে দিগি¦দিক?
মরুর বুকে ফুটবে ফুল!
চোখের পানি ফেলো না ফের।
নশ্বরতার মত্ত নদী ভাঙছে ঢেউ চারধারে-
জীবন নামে কুটির কাঁপে থরথরিয়ে তার পাড়ে।
ভয় পেয়ো না, মত্ত পাগল বন্যা যতই অন্তরে-
নূহ নবীর জাহাজ ঠিকই পৌঁছে যাবে বন্দরে।
যদিও পথ দীর্ঘ আর যাত্রা ভীষণ ভয়াকুল
তবুও আছে যাত্রা শেষে পথের শেষে সেই সে কুল-
যেখানে ভার নামাবে তুমি।
চোখের পানি ফেলো না ফের।
শত্রুদলের বিরুদ্ধতা তাড়িয়ে ফেরে রাত্রিদিন।
ভালোবাসাও নিরুদ্দেশে- হৃদয় বড়ো সঙ্গীহীন।
চোখের পানি দেখেন তিনি, রচনা যাঁর এ সংসার;
তাঁর কাছে তো অজানা নয়- চোখের পানি ফেলো না আর।
অন্ধকারে বন্দী তুমি, নিঃস্ব তুমি বোধ করো-
হাফিজ, তুমি এবার ওঠো, দীনের দেনা শোধ করো।
চিরকালীন বার্তা পড়ো!
চোখের পানি ফেলো না ফের ॥